Must Milk
বোরহানি
বোরহানি বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী এবং প্রিয় পানীয়, যা সাধারণত দই, পুদিনা পাতা, ধনেপাতা, মশলা এবং লেবুর রসের সংমিশ্রণে তৈরি করা হয়। এটি এক ধরনের টক-মিষ্টি ও ঝাঁঝালো পানীয়, যা খাবারের স্বাদকে বৃদ্ধি করে এবং হজমে সহায়তা করে। বিশেষভাবে বিয়ের, ঈদের অথবা বড় পারিবারিক উপলক্ষে আয়োজন করতে গেলে বোরহানি ছাড়া তা অসম্পূর্ণ বলে মনে হয়।
বোরহানির উৎপত্তি
বোরহানির উৎপত্তি বাংলাদেশের মধ্যেই হয়েছে বলে প্রচলিত ধারণা। প্রাচীন সময়ে মুসলিম রাজপরিবার এবং নবাবদের ভোজে বিশেষ দই ভিত্তিক পানীয় পরিবেশন করা হতো, এবং সেখান থেকেই “বোরহানি” শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি গ্রামের মানুষের মাঝেও জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
বোরহানির ব্যবহার ও পরিবেশন
বাংলাদেশে বোরহানি সাধারণত বিভিন্ন বিশেষ উপলক্ষে পরিবেশিত হয়, যেমন:
– বিয়ে, ঈদ, এবং অন্যান্য পারিবারিক অনুষ্ঠানগুলোতে
– অতিথি আপ্যায়নের সময়
– রেস্টুরেন্টে বিরিয়ানি বা কাবাবের পাশাপাশি
বিশেষত, বিরিয়ানি, কাচ্চি, পোলাও, রোস্ট, এবং কাবাবের সঙ্গে বোরহানি পরিবেশন একটি প্রচলিত অভ্যাস। এর টক-মশলাদার স্বাদ ভারী খাবার গ্রহণের পর হজমের প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং মুখে সতেজতা আনে।
বোরহানির গুরুত্ব
ভারী এবং মসলাদার খাবার খাওয়ার পর বাংলাদেশে বোরহানির ব্যবহার অত্যন্ত উপকারী। এটি:
– পেটের ভার কমাতে সহায়তা করে
– হজমে আরাম দেয়
– শরীরকে ঠান্ডা রাখে
– মুখে সতেজ অনুভূতি নিয়ে আসে
এমন কারণে বোরহানি খাদ্যসংস্কৃতির একটি অমূল্য অংশ হয়ে উঠেছে।
বোরহানির উপাদানসমূহ
বোরহানি তৈরির জন্য সাধারণত নিচের উপাদানগুলো ব্যবহার করা হয়:
– টক দই
– পুদিনা পাতা
– ধনেপাতা
– আদা ও রসুন বাটা
– কাঁচা মরিচ
– লেবুর রস
– ভাজা জিরা গুঁড়া
– লবণ এবং গোলমরিচ
– সামান্য বিট লবণ (চাহিদামতো)
– ঠান্ডা পানি
এই উপাদানগুলো একসাথে মিশিয়ে ব্লেন্ড করলেই তৈরি হয় একটি সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর বোরহানি।
বোরহানির উপকারিতা
বোরহানি শুধু স্বাদের জন্যই নয়, বরং স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও বেশ উপকারী।
মূল উপকারিতা:
– হজমে সহায়তা করে
– শরীরের গরম কমায়
– মুখের দুর্গন্ধ দূর করে
– প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিক হিসেবে কাজ করে
– ভারী খাবারের পর আরাম দেয়
বোরহানির পরিবেশনে সচেতনতা
১. অতিরিক্ত মসলা ও টক উপাদান:
 বোরহানিতে বেশি পরিমাণে টক দই, লেবু বা মসলা ব্যবহার হজমে সমস্যা, অম্বল ও গ্যাস্ট্রিকের কারণ হতে পারে।
২. লবণের পরিমাণ:
 বোরহানিতে বিট লবণ বা সাধারণ লবণ বেশি থাকলে তা উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
৩. অতিরিক্ত ঠান্ডা বোরহানি:
 খুব ঠান্ডা বোরহানি পান করলে সর্দি–কাশি বা গলা ব্যথার ঝুঁকি বাড়ে।
৪. সংরক্ষণে সতর্কতা:
 বোরহানি একটি দুগ্ধজাত পানীয়, তাই সঠিকভাবে ঠান্ডা না রাখলে বা দীর্ঘ সময় খোলা অবস্থায় রাখলে এতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে, যা খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে।
৫. ডায়াবেটিস রোগীদের সতর্কতা:
 চিনি যুক্ত বোরহানিতে অতিরিক্ত সুগার ও ক্যালোরি থাকে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর।
সংক্ষেপে
বোরহানি একটি জনপ্রিয় ও সুস্বাদু পানীয়, তবে এটি খাওয়ার সময় পরিমাণ, উপাদান ও সংরক্ষণের বিষয়গুলোতে সচেতন থাকা জরুরি। পরিমিত ও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে বোরহানি পান করলেই এটি শরীরের উপকারে আসবে—অন্যথায় তা ক্ষতির কারণ হতে পারে।
সুতরাং
MustMilk বোরহানি আর কেবল এক গ্লাস পানীয় নয় — এটি বাংলাদেশের খাদ্য সংস্কৃতির একটি অমূল্য অংশ হিসেবে বিবেচিত।
বিরিয়ানির সঙ্গে এক গ্লাস ঠান্ডা বোরহানি মানেই আনন্দ, স্বাদ এবং আরামের নিখুঁত মিশ্রণ!
 
															 
															 
												 
												 
												


 
															